নবজাতকের নাভীর ইনফেকশন (Daily Tips)

শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নাড়ি হচ্ছে শিশুতে ইনফেকশন হওয়ার প্রধান মাধ্যম। সে কারণে নবজাতকের নাভির সঠিক যত্ন এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নতুন মা-বাবাসহ অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না সোনামণিকে কীভাবে যত্নআত্তি করতে হয়। এ ক্ষেত্রে আত্মীয়-পরিজন নবজাতকের যত্নের নানা উপদেশ দিয়ে থাকেন। হাসপাতালে থাকা কালীন নার্স ও চিকিৎসকরা নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানো এবং অন্যান্য যত্নের যে দিক নির্দেশনা দেন, তা মনোযোগ সহকারে জেনে নিন। শিশুকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর নবজাতককে একাধিক লোক যেন ধরা ছোঁয়া না করে, সে বিষয়ে প্রয়োজনে কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে। এতে নবজাতক ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। সঠিক যত্ন পরিচ্ছন্ন প্রসব ও পরিচ্ছন্ন নাড়ি-এ দুটোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
নবজাতকের নাভী দিয়ে যদি সাদা দুর্গন্ধ যুক্ত পুজের মতো কিছু আসে তখন ধরে নিতে হয় বাচ্চার নাভীতে ইনফেকশন বা Umbilical sepsis হয়েছে। এ অবস্থায় নাভীর চারপাশটা লালচে হয়ে যায় এবং নাভী দিয়ে ক্রমাগত ভাবে স্রাব আসতেই থাকে।
স্টেফাইলোকক্কাস নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনে এমনটি হয়ে থাকে, নাভীর স্রাবের কালচার পরীক্ষা করে এটি নিশ্চিত হওয়া যায়।
যা কিছু জরুরি
– প্রত্যেক প্রসবে ডেলিভারি কিট ব্যবহার করা।
– প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দাই বা ধাত্রীর হাত দুটো যেন সাবান ও পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন থাকে। প্রসূতির জরায়ুমুখও একইভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা চাই। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার স্থান যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। নাড়ি কাটার রেজর ব্লেড, সুতা, গজ যেন জীবাণুমুক্ত থাকে।
– প্রসব করানোর পর ধাত্রী হাত দুটো ভালোভাবে সাবানপানিতে ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হাতে নাড়ি কাটবেন।
– নাড়ি কাটার পর তাতে কোনো ড্রেসিং, ব্যান্ডেজ বা অ্যান্টিসেপটিক-কিছুই লাগানোর প্রয়োজন নেই। নাড়ি শুকনো রাখুন। পরিষ্কার ও খোলা থাক। নবজাতক শিশুকে জীবাণুমুক্ত পোশাক পরানো হোক। কদিনের মধ্যে নাড়ি আপনা-আপনি শুকিয়ে যাবে।
নাভিতে ইনফেকশনের যথাযথ চিকিৎসা
– যদি নাভি থেকে পুঁজ বেরোয়, যদি নাভির চারপাশের অংশ লাল হয়ে যায়, তবে তা নাভির সংক্রমণ বলে বিবেচনা করা হয় এবং অনতিবিলম্বে অ্যান্টিবায়োটিকের সাহায্যে চিকিৎসা শুরু করা যায়। যেমন-অ্যামোক্সিসিলিন ১৫ মি·গ্রাম/কেজি প্রতি আট ঘণ্টা অন্তর বাড়িতে পাঁচ দিনের জন্য।
– পুঁজের স্থান সাবানপানিতে ধুয়ে পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত গজ দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। পরে নাভির সংক্রমণের স্থান অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে পেইন্ট করে দিতে হবে। এ কাজে জেনসিয়েন ভায়োলেট, পভিডোন-আয়োডিন বা ক্লোর হেক্সিডিন ব্যবহার করা যায়।
– যদি নাভির সংক্রমণ থেকে পুঁজ বেরোয় বা লাল অংশ নাভির চারপাশে ত্বকে ছড়িয়ে থাকে তবে ইনফেকশন জেনটামাইসিন (৭·৫ মি·গ্রাম/কেজি দৈনিক একবার) ও ফ্লুক্লক্সাসিলিন/৫০ মি· গ্রাম/কেজি প্রতি ছয় থেকে আট ঘণ্টা অন্তর, শিশুর বয়সভেদে) প্রয়োগ করা যায়।
– নবজাতককে যদি নিস্তেজ দেখায়, সে দুধ চুষে খাওয়া বন্ধ করে দেয়, সঠিকভাবে না তাকায়, জেগে উঠছে না বা শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হচ্ছে, তাহলে মনে করতে হবে, এ হলো নবজাতকের গুরুতর ইনফেকশন। তখন শিশুকে তড়িৎ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, যাতে ইনজেকশনের সাহায্যে সম্পূর্ণ চিকিৎসা দেওয়া যায়।
অনেক সময় নাভী থেকে এটি লিভারে গিয়ে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পরতে পারে তখন জন্ডিস, লিভারের ফোড়া সহ ভয়াবহ অবস্থার আবির্ভাব হতে পারে। কখনো কখনো এ ইনফেকশন হাড় অথবা অন্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পরতে পারে। তাই সন্দেহ হবার পর দ্রুত শিশুটিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।
জন্মের পরপরই শিশুর নাভীর যত্ন নিলে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। রোগটি হয়ে গেলে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে এ রোগ ভালো হয়ে যায়।
ডা· প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
source by http://health-bd.com
নবজাতকের নাভীর ইনফেকশন (Daily Tips)
Reviewed by Daily Tips
on
7:14 AM
Rating:

Post a Comment